ঠিক - বেঠিক
আব্দুল মতিন
আমার বাবা একজন চোর-ডাকাত। আমার ৩৩ বছর বয়সে আজও ভাবি আবার কখনো লজ্জায় চোখ ঢাকি, এই সহজ সরল মানুষ মুরগি যবহ করতে যার হাত কাঁপে সে কি করে চোর-ডাকাত হতে পারে। একদম সত্য কথা বাগমারা নাট্য মঞ্চ ক্লাব থেকে চোর- ডাকাতের অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে।
একসময় শীতের রাতে মাঝে মাঝে বাবা মাকে মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেত। বলতো চেউখালী বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাবে আজ রাতে বাড়ি আসবে না।মার বকুনি খেতে খানিকটা প্রস্তুত থাকত বাবা।
কোন এক বিজয় দিবসে আমাদের গ্রামে যাত্রা পালা হবে, বছর বিশেক আগের কথা।শুনেছি বাবাও আভিনয় করবে।আমি ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। রাতের দশটায় যাত্রা পালা শুরু হলো চাদর মুড়িয়ে স্টেজের সামনে বসে আছি, কখন বাবা অভিনয় করতে মঞ্চে আসেন এটি দেখার অপেক্ষা।
না বাবাকে চোখে পড়ল না।
পরের দিন মর্নিং স্কুল,মা ঘুম থেকে জাগিয়ে দিল।পেস্ট খুজতে খুজতে গেলাম বাংলা ঘরে। বসার ঘরকে পুরাতন লোকজন বাংলা ঘর বলতো। চিৎকার করে এবার বললাম মা! ও মা!
দেখে যাও। রাতের যাত্রার ডাকাত শুয়ে আছে আমাদের বাড়িতে। মা মুচকি হাসলো। ঘুম থেকে উঠে চৌকিতে বসল এবার লোকটা।
নিজ চোখে দেখলাম সে আমার বাবা। শেষ রাতে মেকআপ না ছেড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে বাবা। এবার চোখ বন্ধ করে বুঝলাম বাবা কত সুন্দর করে চোর-ডাকাতের অভিনয় করেন।
অনেক যাত্রা গানে অভিনয় করেছেন তিনি।
নবাব সিরাজউদ্দোলাহ
রাজা হরিস চন্দ্র
ভিকারির ছেলে
মধুমালা
চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা ইত্যাদি।
বাবা এখনো সরল মনের মানুষ।শুনেছি সংস্কৃতি মনা মানুষ অনেক সহজ সরল হয়।
বর্তমান সংস্কৃতি মনা মানুষ কিছুটা হিংসুটে, জটিল মনের মনে হয়।
আমি পাখি খুব ভালোবাসি। গত দিনে মা বলিছিল পাশের গ্রামে নাকি কোয়েল চাষ হয়?
আমি ভাবলাম মা পছন্দ করে বোধহয় কোয়েল পাখি।
এক জোড়া কিনলাম 50/- পঞ্চাশ টাকায়।
সাথে ছয় টাকা হালির পাঁচ হালি ডিমও কিনলাম।
মা সকালে দস্তুর মত চালের খুদ খাইয়ে খাঁচার দুয়ার খোলা রেখেছে,যাতে এতো সুন্দর পাখির গলায় ছুরি না উঠে।
দুপুরে পেয়ারা বাগান থেকে এসে দেখি কোয়েল নেই।
মাকে জিঙ্গেস করলাম,মা বলল, ফাঁকা দুয়ার দেখে উড়ে গেছে হয়তো।
মনে মনে ভাবলাম তুমি খাতির যত্ন করলেও যার সামনে কোয়েল পড়বে কোনটা ঠিক-বেঠিক তা সে দেখবেনা।
আমার সাহিত্য ভুবনের পরম সাথী জুয়েল ভাই। পাখির ছবি তোলতে তার সাথে মাইলের পর মাইল ছুটেছি।
কিভাবে ছবি তুলতে হয় অনেক বার শিখিয়েছে।
তার নাম বা আমার স্টুডেন্টের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে কিছু ছবিও দিয়েছি।
বাবার সংস্কৃতির আঁড়ালে যেমন চোর-ডাকাত লুকিয়ে থাকত তেমনি আমার পাখি প্রেমের আঁড়ালে দু একটা ছবি লুকিয়ে থাকত।
একটি পাখির ছবি আমার ভীষন ভাল লাগায় ফেসবুকে দিয়েছিলাম। পরে ভেবেছি এটি ঠিক নয় বেঠিক তাই ডিলিট করেছি।তবে সাহিত্য সংস্কৃতির প্রেমে যে মজা আছে তা ঠিক।আর বেঠিক হলো কাউকে সংশোধন না করে কারো সমালোচনা করা।