***** ভোগান্তি *****
--------- ২য় পর্ব --------
***** জয়ত্রী রপ্তান *****
এরপর আসে অষ্টম শ্রেণি পাশের পরীক্ষা।তখন শিক্ষক দের বক্তব্য থাকে, যেহেতু তোমরা একে অপরের বন্ধু;
সেহেতু কোন প্রশ্নের উত্তর একজন দিতে পারলে, অন্য
বন্ধুকে সহযোগীতা করবা।সন্তানেরা বাবা-মায়ের কথা
না মানলেও,শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কথা ঠিকিই শোনে।
আর পরীক্ষার হলে শুরু হয়ে যায় উদরতা,সহানুভূতি প্রদর্শন। আর
এভাবেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পাশ নিশ্চিত হয়ে, জে, এস, সি পরীক্ষা নামক বৈতরণি পার হয়ে যায় ভালো গ্রেট নিয়ে।আর বাবা-মা ভাবেন আমার সন্তান বুঝি বিদ্যার সাগর অর্জন করে ফেলেছে।সবচেয়ে দুঃখের কথা তার যোগ্যতা কতটুকু সেটা যাচাই করার সম্ভবনা পরীক্ষার মাধ্যমে আদৌ থাকে না।কিন্তু একজন শিক্ষার্থী জানে, তার নিজের জ্ঞানের দৌড়
কতদূর। এইজন্য সর্বউচ্চ গ্রেট পেয়েও অনেকে নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনা।একজন
ব্যক্তির যদি ১০ জন সন্তান থাকে,তাহলে সবাই কি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা শিক্ষিত হয়?আমি তো দেখছি, হয় না।হয়তো দুই /একজন হয়।বাকি গুলো
বাটপার, বদমায়েশ বা অন্য কিছু হয়।তো একজন
বাবা যদি সব সন্তান কে সুন্দর ভাবে মানুষ করতে না পারে,তবে শিক্ষকরা কিভাবে ১০০% শিক্ষার্থীদের পাশ
করাবেন?পেটের দায়,চাকরি বাঁচানোর দায় সবার থাকে,আর এ জন্য ছাত্র পাশের বিভিন্ন পথ খুঁজতে হয়।যাই হোক শুরু হলো নবম শ্রেণির ক্লাস,এবার আসি অজয়ের প্রসঙ্গে, কোন ক্লাসেই পড়া পারেনা,ফলে শিক্ষকদের কাছ থেকে জোটে তিরস্কার ও ভৎসনা এবং সহপাঠীদের থেকে উপহাস।তীর বিদ্ধ পাখীর ন্যায় যন্ত্রণা পোহাতে থাকে অজয়।দিনে দিনে মানসিক অবসাদ আর ক্লান্তি ভর করে।অজয় খেলতে ভালোবাসতো,আজকাল খেলাও তার ভালো লাগে না।
খারাপ ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করে, নেশায় আসক্ত হয়ে যায়।বাড়িতে থাকলে বাবা-মায়ের বকুনি, স্কুলে স্যারদের শাসন।এক পর্যায়ে অজয় সিদ্ধান্ত নেয়
লেখাপড়া ছেড়ে দেবে কিন্তু বাবা-মা তো শুনবে না।অনেক ভেবেচিন্তে মন স্থির করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে।যেমন ভাবা তেমন কাজ।একটা চিঠি লিখে,একদিন ভোরে, বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে নিরুদ্দেশের পথে,ট্রেনের শেষ গন্তব্যের টিকিট কাটে।দিগন্ত পেরিয়ে নিরন্তর ছুটে চলা ট্রেনে বসে, অজয়ের মনে হয় মানুষ হিসাবে জন্মানোর সুখ বুঝি অসীম স্বাধীনতায়!