পুরুষ যখন নারী
ঝুমা ঘোষ
ধরুন জলসাঘরে একটি পুরুষ অনাবৃত বা খুব ছোটো পোশাকে নাচছে তার চারপাশে মদ্যপ মেয়েরা দেখছে আর বলছে বাহ্ বাহ্,বাহ্ বাহ্। না এমনি এমনি নাচ দেখছে তা নয়। তার উপর উড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো টাকা।
কি হল? অবাক হচ্ছেন কেন? সেই বৈদিক যুগ থেকে এভাবেই তো নাচিয়ে এসেছে নারীকে, সমাজ -পুরুষ।
আবার ধরুন না পুরুষ খুলেছে বেশ্যালয়। (অভিধানে বেশ্যালয়ের পুংলিঙ্গ হতে নেই, ভাবুন একবার) মেয়েরা সেখানে দেদার মজা লুটছে।
যাচ্ছেন কোথায় আরো আছে।
এই ধরুন মেয়েটি রাস্তার ধারে
অবলিলায় টয়লেট করছে, পিছনের রাস্তা দিয়ে যাক না দু দশটা ছেলে। তাতে তার কি, সে তো রাস্তার দিকে পিছন ফিরে আছে।
ধরুন পাড়ার মোড়ে সন্ধ্যাবেলা চার পাঁচটা
মেয়ে আড্ডা দিচ্ছে। টিউশন ফেরত ছেলেকে দেখে বাজাক সিটি। তার পায়ের গোড়ালি থেকে চুল পর্যন্ত শরীরের সমস্ত অঙ্গ হোক মেয়েদের আলোচনার বিষয় বস্তু।
ধরুন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে মা আটকে রাখে ঘরে। রাখে আগলে আগলে। পাছে মেয়েরা ছেলেটির, থাক বাকি টুকু নাইবা বললাম।
বাজার করুক মায়ের মেয়ে। অফিস করুক মায়ের মেয়ে। মেয়েটি দাদাকে বলে, রাত বিরেত একা একা বাইরে যাবি না। মেয়েদের যা উৎপাত রাস্তায়।
মেয়েটি ছেলে দেখতে গিয়ে গোটা চমচম মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে বলুক রান্নাবান্না সব জানে তো? আমি কিন্তু খেতে খুব ভালোবাসি। ও আমার কিন্তু একটা স্কুটি চাই। ওটা ছাড়া আমি বিয়ে করবো না।
ধরুন বস্তির ছোট্ট চালের নিচেও আসল বিবর্তন। বৌটা অর্ধেক রাত্রে মদ খেয়ে এসে দরজা পিটিয়ে বলছে এই শালা দরজা খোল। দরজা খুলতে বরের বুকে দু'চারটে লাথি দিলো অকারনে।কথা বলতে গিয়ে বেহুশ হয়ে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পরলো বৌ। বেচারা স্বামী তাকে টেনে ঠিক করে শুইয়ে তার গায়ে কাঁথা টেনে দিলো।
ধরুন সমাজের নিয়ম হঠাৎ করে গেলো পাল্টে। চালু হলো বোরখা নারী নয় পুরুষ পরবে।
বিবাহিত পুরুষ কে পরতে হবে শাখা সিঁদুর।
ভাবুন তো একবার!
ধরুন না, সমস্ত পুরুষ হলো স্ত্রৈণ। যুগ যুগ ধরে পতি ব্রতা স্ত্রী যেমন উপোস করে স্বামীর জন্য পুজা আর্চনা করেছে, করেছে স্বামীকে দেবতা রূপে পুজো। ঠিক তেমন পুজো করুক আজ স্বামী স্ত্রীকে। কি,করতে পারবেন তো?
এমন সমাজ নারী কাম্য নয়।
শুধু এটুকু বোঝালাম এমনটা কি আপনাদের ভালো লাগবে?
আমরা চাইনা কারো মাথার উপর পা দিয়ে হাঁটতে।
চাইনা পুতুলের মতো নাচাতে, হিংস্র পশুর মতো খাবলে খেতে।
আমরা চাই যোগ্য সম্মান, যথাযথ মর্যাদা, একটু স্বাধীনতা।