মনবাকসের চিঠি
লেখা:ইশরাত ইশা
প্রিয়তম,
কেমন আছো জিজ্ঞেস করবনা। আমি ছাড়া কেউ তোমাকে ভালো রাখতে পারবে এটা আমার বিশ্বাস হয়না।আমি কেমন আছি জানতে চাও?আমি বেশ ভালোই আছি।সত্যি বলছি।তোমার চলে যাওয়ার পর বেশ উদাস উদাস লাগতো খুব ভেঙে পড়েছিলাম অনেক দিন ঘুমাতে পারিনি ঠিকমতো।আশ্চর্যের বিষয় হলে ও সত্যি,তারপর আজকাল আর ওসব মনটন খারাপ হয়না।মাথার সেই ব্যামোটা ও গেছে জন্মের মতো।এখন বেশ সকালেই ঘুম থেকে উঠি।রাত জাগবার অভ্যেসটা আর নেই যে।সকালে উঠে দুকাপ চা বানাই তোমার আমার দুজনের জন্য।তোমার কাপে চুমুক অবশ্য আমিই দেই তোমার হয়ে। রেলিঙের ধার ঘেষে বসে নতুন সূর্যদোয় দেখি রোজ।
আমার ভীষন তোমার জন্য চিন্তা হয় জানো? তুমিতো আবার বড্ড একগুঁয়ে আর রাগী। মেয়েটার উপর রাগ করো কিনা কে জানে। লক্ষীটি রাগ করোনা প্লিজ, সবাই তো আর আমি নই।
জানো তোমার দেওয়া সেই গোলাপ গাছটাতে এতোদিনে একটা কুড়ি এসেছে,আমি তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।হুট করে পেছন থেকে এসে খোঁপায় গোলাপ গুঁজে দেওয়ার সেই অভ্যেসটা কি এখনো তোমার আছে? ও নিশ্চয়ই খুশি হয় অনেক!
সেদিন কি হয়েছে জানো?হঠাত করে তোমার সেই পাগল বন্ধুটা ভীরের মাঝে ভাবী ভাবী বলে ডাকছে।পাশে রজনী ছিল।বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম,ওউ মনে হয় লজ্জাই পেলো।কি আর করবে পুরোনো অভ্যেস যে।ও হয়তো ভেবেছে আমি খব কষ্ট পেয়েছি ওর অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পেল।অথচ আমি দিব্যি ভালো আছি।
তুমি বুঝি আর পার্কে টার্কে যাওনা?ঋতি মেয়েটি প্রায়ই তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।ঋতিকে চিনেছো? ওইযে ফুলওয়ালি মেয়েটি। তুমি মাঝে মাঝেই মেয়েটির সব ফুল কিনে নিয়ে আমাকে উপহার দিতে,আর বলতে একসাথে দুটি মেয়েকে খুশি করা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবথেকে কঠিনতম কাজ গুলোর মধ্যে একটি।তোমার কথা শুনে আমরা দুজনই খুব হাসতাম।তুমি তখন বলতে একসাথে দুটি মেয়ের মুখে হাসি দেখা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যের একটি।
তুমি খব পাগলামী করতে একটা সময়।হঠাত করে বাসার সামনে চলে আসতে,বৃষ্টি হলেই ভিজতে চাইতে আমাকে নিয়ে।তোমার ঠান্ডা লাগার ভয়ে আমি তোমাকে ভিজতে দিতে চাইতাম না সেই নিয়ে তোমার কি অভিমান।ছেলেমানুষিগুলো এখন ও আছে?এখন ও কি বৃষ্টি হলেই নেমে পড়ে ওকে নিয়ে?
আমার মুখটা কি তোমার এখন আর মনে পড়ে রুপম?
মাঝে মাঝে তোমাকে খুব লিখতে ইচ্ছে করে।লেখা হয়ে ওঠেনা।কি করব বলো সময় নষ্ট করার মতো সময় আর হয়ে ওঠেনা।আজ কি ভেবে লিখতে বসেছি জানিনা।না তোমাকে এই চিঠি পাঠিয়ে কারো সামনে বিব্রত করার ইচ্ছে আমার নেই।এই চিঠি জমা থাকবে আমার মনবাকসতেই।আজ রাখছি গোলাপ গাছটায় পানি দিতে হবে। নিয়ম করে দেই দুবেলা। তোমার একটা জীবন্ত স্মৃতি।
আমাকে নিয়ে ভেবোনা লক্ষীটি আমি বেশ ভালো আছি।আমার দুশ্চিন্তা তোমাকে নিয়ে।আমি জানি আমাকে ছেড়ে তুমি ভালো নেই।
ইতি
তোমার রুপকথা