আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা | প্রিয় শিক্ষক নিয়ে উক্তি | শিক্ষক নিয়ে কিছু কথা | অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক


আমার শিক্ষক,শিক্ষকদের আবদান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রিয় শিক্ষক, 

শিক্ষাঙ্গনের সেই তীক্ষ্ণ ঘন্টার আওয়াজ আজও প্রতিনিয়ত আমার কর্ণে প্রতিধ্বনিত হতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা সুখের হলেও শান্তি নিমজ্জিত প্রাথমিকে। আর তারই প্রতিফলন আজ শিক্ষক দিবসে আমার মনের কুটিরে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিশেষ করে যার শূন্যতার উপলব্ধি বর্ধিতরূপে তিনি অবসরপ্রাপ্ত, পৃত্রীতুল্য, দায়িত্বনিষ্ঠা ও সততাপ্রচারক আমার এক শিক্ষাগুরু। নামটা না হয় পরেই বলবো।

আজ এই বৈচিত্র্যপূর্ণ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেওয়ার নিমিত্তে কিছু লেখার প্রয়াস—

সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের মধ্যে প্রথমে বিদ্যালয়ে যাঁর পদার্পণ ও সবার শেষে প্রস্থান.... এ প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বদা অগ্রণী ভূমিকায় স্থান পেয়েছেন। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ছুটি না নেওয়ায় কেউ তাঁকে অতিক্রম করতে পারেনি। শেষের দিকে তাঁর ঝুলিতে পূর্ণ বছরের স্বাস্থ্য ছুটি মজুত ছিল। তাঁর কণ্ঠের আওয়াজ সুউচ্চ না হলেও তা ছিল গম্ভীর। দৈনন্দিন পত্রিকাটি তাঁর জন্যেই সকাল সকাল আসতো, আর তাঁর কাগজ পড়ার ভাবভঙ্গি দেখে আমরাও লোভে পড়ে যেতাম।



বিদ্যালয়ের গায়ে গা লাগিয়ে ছিল আমাদের হোস্টেল (ছাত্রাবাস)। সকাল ৯ টার সময় স্কুলের মাঠে মোটর বাইকের গুঙ্গানো আওয়াজ আমাদের সতর্ক করে বলতো যে, "He has come"। এটা আমাদের জন্য শালিক তাড়ানো টিনের আওয়াজের ন্যায় হলেও তা ছিল শৃঙ্খলার মাধ্যম।



ক্লাসে অন্য শিক্ষকদের আসার আস্থা না থাকলেও তাঁর প্রতি ছিল পূর্ণ ভরসা। কিন্তু তিনি যে বিষয়টি নিতেন তা আমার কাছে ছিল কালমেঘ বা নিমের পাতার ন্যায় তেতো। এই পাতার তিক্ততা অতিমাত্রায় হলেও তা যেমন উপকারে সীমাহীন, এটাও ছিল আমার জন্য অনুরূপ। আর সেই বিষয়টা হল গণিত। স্যার বলতেন— “যারা জ্যামিতি পারবে না তারা ম্যাট্রিক ফেল করবে”। খারাপ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপপদ্য ও সম্পাদ্যের উপদেশ সদা অব্যাহত থাকতো। নিজের পুত্র অঙ্কে ১০০ মধ্যে  ৯৯ পাওয়ায় তিনি বড্ড নারাজ। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আত্মীয়ের আমন্ত্রণপত্র তাঁর অবস্থার পরিবর্তন করাতে ব্যর্থ হয়েছিল। অপারক ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বসিয়ে হাতে ধরে কঠোর হয়ে শেখানোই তিনি ছিলেন দৃষ্টান্তরূপ। তিনি কুঞ্চি বা বেতের ব্যবহার কম করে ঝোঝাতেন বেশি, আর তাতেই আমরা জব্দ। পরবর্তীতে কেবল শিক্ষক হিসাবে নয়, নিজেকে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদও বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজীবন তিনি মোরগ ফুলের রঙে স্যালুট ঠুকেছেন। ও হ্যাঁ! তাঁনার নামটাই তো বলা হলো না, তিনি হলেন আমার শ্রদ্ধাভাজন আদর্শের প্রতীক জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাহেব।



সম্প্রতি ২১শে জানুয়ারি ২০২০ সালে তাঁর বিদায়ীপত্র  পাঠায় রাজ্য সরকার। পুরানো হলেও আমরা কজন আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সেদিনের বক্তব্যই ছিল কেবল দুঃখ ও হতাশা। অশ্রুসিক্ত হয়েছিল প্রতিটি নয়ন। উপহারের সীমা ছিল না। ঈর্ষান্বিত হচ্ছিলো অতীতের শিক্ষকরা। কিন্তু এ যে আদর্শের জয়, আর এটাই বাস্তব। আমিও এমনই এক আদর্শ শিক্ষকের সদিচ্ছা আপন অন্তরে পোষন করি। সর্বোপরি ছন্দ দিয়ে অন্ত হোক......



                        হে প্রিয় শিক্ষক 


               কিসে যায় আপনারে ভুলে,


              আপনার মতো মহান মানুষ


              পাইনি আমার শিক্ষাকুলে।


কলমে:- হাবিবুর রহমান




                       আরও পড়ুন 👇👇 

                কোকিল গিয়েছে উড়ে



Blogger দ্বারা পরিচালিত.