যৌতুক প্রথা বাংলা গল্প

               যৌতুক প্রথা

     ইসমাত জাহান সিলভী আয়াত


আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে-

আমি দেখতে তেমন আহামরি সুন্দরী না এবং

গাঁয়ে রং কিছুটা চাপা।

পঁচিশ বয়স হলেও আজও আমার বিয়ে হয়নি কারন 

আমার বাবা নিম্ন আয়ের মানুষ তাই

যৌতুক নামক অভিশাপের গন্ডি পেরিয়ে যেতে পারিনি।

আমার ছোট ছোট ভাই বোন গুলোর লেখাপড়া,

ও সবার ভরণপোষণে আমার বাবা জর্জরিত।

তারপরেও আমার বাবা অসংখ্যবার চেষ্টা করেছেন 

আমাকে পাত্র পক্ষকে দেখানোর জন্য।

মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেশি পণ্য মনে হয়!

পাত্র পক্ষর সামনে কখনো হেঁটে দেখাতে হয়,

কখনো হাতের লেখা দেখাতে হয়, কখনো 

সুরা পড়ে শুনাতে হয়, কখনো রান্না বান্নার প্রণালী শুনাতে হয়,

নয়তো হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

এইভাবেই যেনো অধিকাংশ দিন গুলো কাটে আমার,

কিন্তু প্রতিবারই দেওয়া নেওয়ার লেনদেনে সম্বন্ধটা ভেঙ্গে যায়।


আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে-

মেয়েদের চাকরি করাটা আমাদের মফস্বলে

আজও ভালো চোখে দেখে না।

হাজারটা দুর্নাম জুড়ে যায় একটা মেয়ের চরিত্রে যদি 

কাজ থেকে কখনো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে।

তাই বাধ্য হয়েই চাকরিটা ছাড়তে হয়েছে লোকের কথার ভয়ে!

অভাব আমাকে যতটা না অভাবী করেছে তারচেয়েও

হাজার গুণ অভাবী করেছে এই যৌতুক প্রথার কাছে।

অথচ আমার মা বাবা আমাকে মানুষ করতে কোন কমতি

রাখেননি তবুও যৌতুকের বলির পাঁঠা হতে হয়েছে আমাকে।

মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে এখন,

আমরা কতটুকু স্বাধীন এই সমাজে?

আধুনিক পোশাক পড়লে লোকে বলে বেহায়া মেয়ে!

সন্ধ্যার পর চাকরি থেকে ফিরলে বলে বদমাশ মেয়ে!

প্রেমিক থাকলে বলে চরিত্রহীন মেয়ে!

শিক্ষিত বেশি হলে বলে এই মেয়ে সংসারী হবে না!

কম শিক্ষিত হলে ছেলের জন্য এই মেয়ে চলবে না!

সংস্কৃতিমনা হলে তো এই মেয়ে পুরোই নষ্টা!


এত এত অভিযোগের মধ্যেও আমরা প্রতিনিয়তই

বেঁচে থাকি, আমাদের তবুও বেঁচে থাকতে হয়।

যতই শিক্ষিতই হই না কেনো, যতই পারদর্শীই হই না কেনো

তবুও আমারা যৌতুক প্রথার উর্ধে নই। 





                              আশার ছায়ায় মানুষের জীবন









  1. "সমাজে স্ত্রী প্রতিরোধে কবিতা"
  2. "যৌতুক ও স্ত্রী স্বাধীনতা"
  3. "স্ত্রীর প্রতি অভিযোগের কবিতা"
  4. "সমাজে স্ত্রীর স্বাধীনতা এবং অভিযোগ"
  5. "স্ত্রী ও যৌতুকের প্রতি সমাজের দৃষ্টিকোণ"
Blogger দ্বারা পরিচালিত.