আমি রাস্তার ছেলে
- মোঃ সুজন আলী
তোমরা সোনালি শৈশবের কথা বল।
ক্লান্ত দুপুরে ডুব সাঁতারে উম্মাদ আনন্দের কথা বল।
মাছ ধরার অপার সুখের কথা প্রকাশ কর কবিতার আনাচে কানাচে!
উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়-
মায়ের মিষ্টি বকুনির কথা বল!
আমার নাহ্! আমার মা ছিল নাহ্!
চার ছুঁইছুঁই, তিনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন-
না ফেরার দেশে!
তারপর কত কেঁদেছি! কত উচ্ছিষ্ট খাবারে দিন কেটেছে আমার!
উচ্ছিষ্ট খাবারের গন্ধ লেগে থাকত-
আমার শরীরের অষ্টেপৃষ্ঠে!
মনে হত,আমি নিজেই একটা উচ্ছিষ্ট!
কত ধনী লোকের হাত পড়েছে আমার দুগালে!
কত ঘাড়ের ধাক্কায় লেপ্টে পড়েছি রাস্তায়!
সে আমি জানি।
আমার তোমাদের মত সোনালি শৈশব ছিল নাহ্!
কৈশোর ছিল নাহ্!
প্রচণ্ড ঝড়ে আম কুড়ানো আনন্দের কথা আমি বলতে পারব নাহ্!
দল বেঁধে বরই চুরির আনন্দ-কথা আমার জানা নেই!
তোমরা প্রচন্ড মন খারাপের দিনে সোনালি অতীতকে ভেবে মন ভাল কর, শান্তি পাও।
আমার তো সেই অতীতটুকুও নেই!
আহার অন্বেষণেই কেটেছে আমার রাত-বিরাত!
কেটেছে ১৬ টি বৎসর!
আমার তোমাদের মত-গোল্লাছুট, কাবাডি, কানামাছি খেলা হয়ে উঠেনি!
মায়ের হাতের সুস্বাদু খাবারের কথা আমার মনে নেই!
প্রচণ্ড ভয়ে মায়ের বুকে ঘুমানোর কথাও নাহ্!
বাবা-সে তো অনেক আগেই নিরুদ্দেশ!
ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতার কথা আমি জানি নাহ্!
কেউ শেখায়নি আমায়!
তোমাদের মত দিন-বছর কাটেনি আমার!
ইদে নতুন কাপড়-সে আর কি বলব?
দেয়নি! কেউ নাহ্!
সত্যি বলতে,আমার ইদ-ই ছিল নাহ্!
আমি তোমাদের মত নাহ্!
আমি পথের ছেলে-
হ্যাঁ, আমি রাস্তার ছেলে!