জনক জননী এ্যাকুরিয়াম

 জনক জননী এ্যাকুরিয়াম

------অর্ঘ্য দাস


রাজধানীর মধ্যমণি গুলশান বনানী থেকে শুরু করে উত্তর দক্ষিণে মোট সাইত্রিশটি ব্রাঞ্চ। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বহু দামী কারুকাজের মূল্যবান হরেক রকমের এ্যাকুরিয়ামের সমারোহ। নিলঞ্জনা এই জনক জননী এ্যাকুরিয়াম এর স্বত্বাধিকার। তিনি এখন লং ড্রাইভে যাবেন। চকচকে বি এম ডাব্লিউ এর সামনে ফিটফাট সাদা পোশাকে রেডি ড্রাইভার।


ছোটবেলা থেকেই শখ এ্যাকুরিয়াম কেনার। শখ বলে শখ। স্বপ্নেও এ্যাকুরিয়াম দেখতাম। হত দরিদ্র পরিবারে তিনবেলা খাবার জোটে না আবার এ্যাকুরিয়াম! আমার বাবা ছিলেন গৃহত্যাগী কাপালিক। মা সর্বংসহা। খুব সকালে কয়েকটা মাঠ ভেঙ্গে ব্যাচেলরদের রান্না করতে যেতেন।গ্রামের সবাই জানতো টিউশনি।পাঠশালার পন্ডিতমসাই এর মেয়ে আমার বয়সী। সেই আমার খেলার সাথী। তাদের বাসাতে ঘরদোর মোছা, বাসন মেজে দিতাম। দুপুরে মাটির বাসনে বাসি লালচে ভাত,লবন আর দুটো কাঁচালংকা। দুপুরে বাবুর হাত পা টিপে দিতাম। সেও টিপতো আমার বয়ঃসন্ধি শরীর। চলে আসতে মন চাইতো। কিন্তু ওদের বাসাতে কাঁচের বড় সেকেলে এ্যাকুরিয়ামে জীবন্ত কংকাল সোনালী রুপালী রঙ্গিন মাছগুলি খেলা করতো। কেমন জানি নেশা ধরে যেত। আসতেই পারতাম না।আমি তার সামনে দিনের পর দিন বসে থাকতাম বিড়ালের মতো।


হঠাৎ করেই বাতাসে প্রবল গতিতে ফিসফাস, কানাকানি। আমার মা, চার মাসের গর্ভবতী। তার কিছুদিন পর বাবা ভয়াবহ ক্ষয়রোগ নিয়ে ফিরে এলেন। একদিন ভোর রাতে উঠানের তেঁতুল গাছে দেখি মা ঝুলে আছে। শ্মশান থেকে ফেরার পথে বাবার রক্ত বমি। রাস্তাতেই মারা গেলেন।


ম্যাডাম পোস্তগোলায় চলে এসেছি। ড্রাইভারের কথায় নিলঞ্জনার সম্বিত ফিরে এলো। আজ কালীপূজা। মা বাবার মৃত্যুর তারিখ মনে নেই। নেই সেই শ্মশানের স্থান। তবু এখানেই প্রতি পূজায় সে ফিরে ফিরে আসে। অনেক মোমবাতি আর ধুপকাঠির ধোয়ায় তার চোখের জল আড়াল হয়ে যায়। সেও মঙ্গলদীপ জ্বেলে প্রার্থনা করে। হে ঈশ্বর, জনক জননী এ্যাকুরিয়ামের রঙ্গিন মাছ হয়ে যেন আজীবন পাশে থাকে।।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.