ফাগুন বেলায় কবিতা — প্রতিমা ধর

   

শিরোনামঃ ফাগুন বেলায়

কলমে : প্রতিমা ধর


সারাটা দিন খুব ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে 

দিবাকরের-

নিদ্রা দেবীর যেন আর তর সইছিলো না। 

দরজায় ঠক্ ঠক্ আওয়াজ,দরজা 

খুলে ক্লান্ত ও অবাক চোখে তাকালো 

এ- কি-' মধুরীমা' তুমি...!!!


কেমন আছো দিবাকর ?

কতদিন তোমার সাথে দেখা নেই...নেই কথা !

আজ তাই, খুব ইচ্ছে হ'ল তোমার সাথে 

দেখা করে দু'টো কথা বলি...

তোমার সময় নষ্ট হবে না-তো আবার...!


মনে পড়ে তোমার সেই সব দিনের কথা.... ?

কলেজের করিডোরে প্রথম দেখা হয়েছিল 

তোমার সাথে আমার..

গায়ে আকাশী রঙের শার্ট, আর ধূসর রঙের প্যান্ট,তোমার হাতে ছিল লাল- পলাশ রঙে

রঞ্জিত একটি বই।

বই আমার খুব পছন্দের, আর সেটা

যে ধরণেরই হোক না কেন ?

অনেক উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাকে-'কি বই'? 

সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলে তুমি,

হঠাৎ কোন এক অপরিচিতার -এমন প্রশ্নে।

উত্তরে বলেছিলে শুধু -'কবিতা'

বই টা শেষ পর্যন্ত পড়তে দিয়েছিলে আমায়। 

সেই থেকে আমাদের পরিচয়, কথাবার্তা,চলাফেরা। 

দিন দিন সম্পর্কটা আরো গভীরতর হতে লাগলো-

কলেজ পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবতরণ করলাম দুজনেই,

সেও আবার ভাগ্যক্রমে একই যায়গায়, একই ডিপার্টমেন্ট ! 

তর্ক- বিতর্কে বরাবরই সুনাম ছিল তোমার,

আর আমি আবৃত্তি -তে।

বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে একই ডিপার্টমেন্টে নিযুক্ত হলাম দুজনে,

হাতে হাত রেখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন -সাধ ও পূরণ হলো একদিন।

সুখে -দুঃখে জীবন গতিপথ চলল মধুময় ধারায়। 


১ম বিয়ে বার্ষিকীর কয়েক দিন পর- আমার জন্মদিনে...

ফাগুনের পড়ন্ত বিকেলে তুমি আমি একদিন হাতে হাত রেখে,হাঁটছিলাম তোমার পছন্দের পথ ধরে। হঠাৎ....

আমি উঃ.......! বলে চিৎকার করতেই

তুমি,

শক্ত করে ধরলে আমার হাতখানা।

আরো গভীর হয়ে তাকিয়ে দেখছিলে-

আমার শরীর থেকে গুলির আঘাতে রক্ত ঝরছিলো অবিরত ধারায়,তুমি তখন দিগ্বিদিক হারিয়ে তোমার প্রিয় নাম ধরে বলছিলে,

কি হলো 'মাধু'......!!!

"বিরাট মিছিলের শব্দ- কানে বাজতে লাগলো.... 

রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই,আমাদের দাবী মানতে হবে মানতে হবে।"

তারপর আমি জ্ঞান হারা হয়ে যাই,হয়তো এভাবেই চিরবিদায় নিতে হয় আমাকে।


৮ই ফাল্গুন, 

আজ -সেই স্মরণীয় দিন ,

তোমার 'মধুরীমা'র জন্মদিন...! 

তাইতো সারারাত জেগে তুমি অনেক যত্ন করে, 

পছন্দের ফুল দিয়ে আজও সাজিয়েছো তোমার ঘর।


দিবাকর, কেন এমন করো... ? 

কেন ভুলে যাও না এই দিনটিকে?

আজও গাঁদা, পলাশ,গোলাপ, রজনীগন্ধা

প্রস্ফুটিত হওয়ার আশায় প্রহর গুনে গুনে কাটে , এই দিনটির অপেক্ষায় থাকো প্রতিনিয়ত, তোমার ধৈর্যের আলো জ্বেলে ! 

আর আমি...! আমি তা অনুভব করি......!!!


ভোর হয়ে গেছে দিবাকর , এবার ওঠো,

শহীদ মিনারে যাবে,

আবার দেখা হবে,বিদায় বন্ধু, বিদায়.......।


হঠাৎ দিবাকরের চেতন ফিরলো,

তাকিয়ে দেখে,সত্যিই ভোর হয়ে গেছে, পাখিরা তাদের মন মাতানো সুরে গান ধরেছে। 

সে মনে মনে ভাবে,

তবে কি এতক্ষণ স্বপ্নে বিভোর ছিলাম আমি....!


 আর দেরী করা যাবে না,একগুচ্ছ তাজা গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা মেশানো পুষ্পস্তবক নিয়ে পা বাড়ায় শহীদ মিনারের দিকে,

কানে ভেসে আসে, চিরচেনা সুরধ্বনি -

"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, 

আমি কি ভুলিতে পারি !"


যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি -আমাদের মায়ের মুখের ভাষা, আমাদের রক্ত ঝরা ফাগুন, সেই সব স্মৃতি সত্যি কি কখনো ভুলা যায় যে....!! 

এসব ভাবতে ভাবতে দিবাকরের কপোল বেয়ে,

কখন যে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে,

সারা রাত আস্ফুট স্বরে দমে থাকা শিশিরবিন্দুর মতো -

তার হাতে রাখা পুষ্পস্তবকের উপর।

সত্যি.., টের ই পায় নি সে......!!!


আরও পড়ুন 👇👇

ভোরের স্নিগ্ধতা

Blogger দ্বারা পরিচালিত.