কে এই আনিস খান?

               লিখেছেন - আব্দুল মাতিন

                            কে এই আনিস খান?

একজন গণআন্দোলন কর্মী, ISF এর সদস্য, AIMIM এর সদস্য, WPI এর সদস্য, SFI এর সদস্য, AIMA এর একজন সদস্য, নাকি কেবলই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা! কোনটা ঠিক? আনিস আসলে কার?


আনিস খান হত্যার প্রতিবাদে মানুষ যখন রাস্তায় নেমেছে তখনই একদল মানুষ তাকে এটা চিহ্নিত করতে তৎপর হয়ে ওঠে যে "আনিস আমাদের"! এবং তারা সকলেই তার প্রমাণও দেয়। এমনকি দেবাংশু ভট্টাচার্য দিদিমণির অবৈধ দাবি প্রমাণের প্রচেষ্টায় কমতি রাখে নাই। কিন্তু বাকি প্রমাণগুলো অনেকাংশে সত্য।

তাহলে আনিসের আসল পরিচয় কি? আনিস কি একজন পাগল - যে কিনা এর ওর দুয়ারে ছুটে ছুটে বেড়াতো? আনিস কি কোন "ফোবিয়ার" শিকার?


এই সবকটা প্রশ্নের একটাই জবাব। "না"!

আনিশ খান
আনিশ খান


আনিস খানকে নিজের করে দেখানোর যে অপচেষ্টা চেষ্টা বাম বা তৃণমূল বা অন্যান্য দল করেছে আদতে আনিস এই অন্যায় দাবীর বিরুদ্ধে একটা আদর্শ। হ্যা আনিস কোন নির্দিষ্ট দলের লোক ছিল না। আনিস খান নিজেই একটা "আদর্শ"।


কিরকম আদর্শ? কি ছিল তার স্বপ্ন?


আপনি যদি আনিস খানের এতদিনের চলার পথ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন তবেই বুঝতে পারবেন। আমি যতটুকু বুঝলাম তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।


পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষায় দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। এবং সেই সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে ছিল আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে। প্রচন্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও কিছু বাঙালি মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসেছে একটা শিক্ষিত যুবসমাজ। যারা পৃথিবীটাকে তাদের বাপ দাদাদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটু ভিন্ন নজরে দেখতে শুরু করেছে। যারা বুঝতে শুরু করেছে তাদের নিয়ে হওয়া "খেলা"! যাঁরা ছিন্ন করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পরাধীনতার শিকল। যারা থাকতে চাইছে সমাজের মূলস্রোতের ধারায়। আনিস খান তাদেরই একজন।


বাম আমলের শেষের দিকে সাচার কমিটির রিপোর্ট গোটা বাংলার মুসলমান সমাজকে আন্দোলিত করে তোলে। মানুষ বুঝতে শুরু করে যে তাদের সাথে প্রতারনা হচ্ছে। যদিও সবাই এক নয় তবুও "সমাজতন্ত্রের" নামে এক শ্রেণীর মিথ্যুক মানুষ মুসলমানদেরকে ব্যবহার করেছে তাদের স্বার্থে, তাদের প্রয়োজনে। মানুষ সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে এক নতুন স্বপ্নকে সামনে রেখে। তখন সবার মুখে মুখে "মা মাটি মানুষ"! গোটা বাংলার ভূমিপুত্র মুসলমান আস্থা রেখে বাংলার মসনদকে তুলে দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনার শিকার এই মুসলমান সমাজ ভেবেছিল যে তাদের দুর্দশা হয়তো এবারে ঘুচে যাবে। ভেবেছিল নতুন ভোর তাদের জন্য সুমধুর হবে। কিন্তু যতই বেলা গড়িয়েছে ততই মানুষের স্বপ্নগুলো চুরমার হতে দেখে এই আনিস খানের মতো কিছু যুবক। এরা বুঝতে পারে যে মমতা ব্যানার্জি বা তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যে প্রতারণার ছক তৈরি করেছে। এরা বুঝতে পারে যে মমতা ব্যানার্জি বা তার দল ক্রমেই ধ্বংস করতে থাকে বাংলার বিরোধী বাম, কংগ্রেসকে। এবং তারা বুঝতে শুরু করে এই বিরোধী শূন্য পরিবেশে দানা বাঁধতে সুযোগ পাচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিধ্বংসী মনোভাব। এবং যার ফলে এই বাংলার মাটিতে বিজেপির ঘাঁটি শক্ত হতে শুরু করে। এর পর ধীরে ধীরে বিজেপি NRC CAA Tripple Talaq, 370 ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুতে মুসলমানদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। আর দিদিমণি রণংদেহি ভাবমূর্তিতে লড়াই চালিয়ে যায় বিজেপি নামক মহাশক্তিশালী দলের বিপক্ষে। সাধারণ মুসলমানরা তার এই অবস্থা দেখে আরও বেশি খুশি হয়ে এবং কিছুটা ভয়ে ভরপুরভাবে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেয় শাসক দলের পক্ষে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে মুসলিম শিক্ষিত যুবসমাজের এই অংশ । এরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দেয় -

▶️ মমতা ব্যানার্জি CAA পাশ করার সময় কেনো নিজের MP দের সরিয়ে নেয়?

▶️ এরা প্রশ্ন তোলে CAA পাশ হওয়ার পরেও চারদিন মমতা ব্যানার্জি কেনো নিশ্চুপ? এরা দেখতে পেলো যে CAA পাশ হওয়ার পরেও মুসলমানরা দিশেহারা। কেননা যে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর এদের এত ভরসা তারা নিশ্চুপ। তাই সেদিন জুম্মার নামাজের পর মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এলো। নেতৃত্বহীন আন্দোলন এমন পর্যায়ে গেলো যে কোথাও রেল কামরা পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হলো। সেদিন আমার এক বন্ধু মুর্শিদাবাদ থেকে আমাকে ফোন করে বললো , "ভাই! আজকে আমার মনে হচ্ছে যে আমাদের নিজেদের নেতৃত্বে একটা রাজনৈতিক দল থাকা খুব প্রয়োজন। কারণ নেতৃত্বহীন এই এই আন্দোলন পরিবেশকে আরও বিষাক্ত করে তুলছে!" অনেকেই সেদিন থেকে স্বপ্ন দেখতে থাকে একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তির। আনিস খান সেই স্বপ্নের একজন অংশীদারি। আর সেদিনের পর থেকে NRC CAA বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হতে থাকে। অথচ সেদিনের পর তৃণমূলের লক্ষ্য হয়ে উঠলো এই সব আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে নেওয়া। পার্ক সার্কাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় যারা আন্দোলন করেছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে বাঁধা দিতে শুরু করে। শিক্ষিত যুবরা বুঝতে পারে যে তৃণমূল কংগ্রেস কোনমতেই আমাদের সংগঠিত হতে দিতে চায় না। এরা যেনো ঠিকা নিয়ে রেখেছে আমাদের।


▶️ এই শিক্ষিত সমাজ বুঝতে পারে যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মারামারি, খুনোখুনি বেশি এবং এখানে মানুষের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কম।


▶️ এঁরা বুঝতে পারে যে উচ্চবর্ণ পরিচালিত এই দলগুলো তাদেরকে দুধেল গাই মনে করে। দুধেল গাইয়ের খেদমত ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ দুধ পাওয়া যাবে।


▶️ এঁরা বুঝতে পারে যে এই দলগুলো পিছিয়ে পড়া এই এই সম্প্রদায়কে কেবল গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়। যারা গোলামী করতে চাইবে না তার পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর এক গোলামকে। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তাদের মুখ।


▶️ এরা বুঝতে পারে যে এদের গোলামীর শিকল ছিঁড়তে হলে চাই এক নতুন শক্তির। যা তাদের অধীনে থাকবে। তাই এরা নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।


▶️ বাংলার মাটিতে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ISF, MIM ও অন্যান্য দল।


আনিস খান একটা আদর্শ। সে এই নব্য শিক্ষিত মুসলিম যুব সমাজের একজন প্রতিনিধি। সে চাইছিল যে কোন প্রকারে MIM, ISF, WPI সহ বিরোধি CPIM কংগ্রেস সবাই শক্তিশালী হোক। গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে সমস্ত বিরোধী মতামতকে শক্তিশালী করবে। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে উচ্চবর্ণের অধীনের বাইরের এই দলগুলোকে মজবুত করার। আর সেই জন্যেই তাকে টার্গেট করে কিছু অশুভ শক্তি। তাকে মারার মাধ্যমে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় স্বাধীনতাকামী এই নব্য শিক্ষিত সমাজের ভাবনাকে।


তাই আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো যে আনিসকে মেরে ফেললেও তার আদর্শকে যেন কোনোভাবেই মেরে ফেলতে না পারে এই সব স্বৈরাচারী শক্তি। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যাতে আমরা ছিঁড়ে ফেলতে পারি এই দাসত্বের বন্ধন।


জয় হিন্দ।

আনিস খান জিন্দাবাদ।

লিখেছেন -আব্দুল মাতিন।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.