কৃষ্ণকলি কবিতা — সঞ্জয় প্রামাণিক

 কবিতা

কৃষ্ণকলি

""""""""""""

চোদ্দো অথবা পনেরো

বয়স তখন, 

সেই ইস্কুলেতে পড়ি। 

যম কালো রঙ

চামড়া আমার

গায়ে মানাতো না শাড়ি।  

গ্রামের লোকের

চোখের মুখের ভাষা

বুঝিয়ে দিত অনেক । 

গরীব লোকের মেয়ে 

দীন দুঃখী তাই

ভরসা ছিল ক্ষনেক।

পড়াশোনায় ছিলাম 

অনেক ভালোই

এক থেকে পাঁচ রোল । 

সবার প্রশ্নের পর

প্রশ্ন করে আমি

খাইয়ে দিতাম ঘোল। 

ছিলনা তবলা বাঁয়া

হারমোনিয়াম 

গান বড়ো ভালোবাসি। 

কৃষ্ণ আমার প্রাণের

গানেরও প্রিয়

ছিলাম ঐ কৃষ্ণ দাসী। 

পুকুর ঘাটের 

জলের উপর দেখি

প্রতিচ্ছবি ভাসে। 

আমি কালো কৃষ্ণ কালো

জল কালো দল কালো

ঢেউগুলো সব হাসে। 

লোকে চেনে কৃষ্ণকলি

নামটি আমার

রূপের কিছুই নেই। 

তবু এই রূপেতেই

মজল জগত 

বেশ্যা বাড়িতেই। 

এখন আমি সুন্দরী

পয়সা আছে প্রচুর

অহংকারের নয়। 

গ্রামের লোকের ঘৃণা

করল আমায় পর

তাই লাগে বড় ভয়। 

অত্যাচারে অবিচারে

একরত্তি মেয়ে আমি

ভালোবাসতে সিখেছি। 

অজ্ঞানেতে ভালোবেসে

আজ এইখানেতেই

নোংরা পথে এসেছি। 

বিমল অমল ছিল শত

প্রেম করতে উদ্যত

একলহমায় কি যে হল, 

ছদ্মবেশী মির্জাফর

নাম পাল্টে ভালোবেসে

এই বেশ্যালয়ে বেচে দিল। 

কত যন্ত্রনাতে আমি

আজ অনেক বছর 

কাটিয়ে দিলাম এসে। 

বাবা মায়ের মুখটা 

আমার চোখের কোণে

উঠছে কেবল ভেসে। 

আমি বহু বার ভাবি

দেশের বাড়ি যাব

মনে বড় সাধ হয়। 

কিন্তু যেথা বাবা নেই

মা নেই, ভালোবাসাও নেই

সেথা লাগে বড় ভয়। 

আজ অনেক বছর পরে

সেদিনের কৃষ্ণকলি

বেঁচে আছে কিছু কথা ভুলে।

বেঁচে আছে স্মৃতিগুলো

অনেক পাওয়া না পাওয়া

তবু বেঁচে আছে মাথা তুলে।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.